গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম গর্ভাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করা অনেক সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো সিজারিয়ান অপারেশন এর প্রয়োজন কমে গিয়ে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করলে যেমন শরীর ফিট থাকে তেমনি গর্ভাবস্থায় পরিবর্তনগুলোর  সাথে মা নিয়ে নেওয়া ততটা সহজ হয়ে ওঠে। ঘরে বসে নিরাপদে গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা এই আর্টিকেলের মধ্যে তুলে ধরা হবে সেই সাথে প্রতিনিয়ত সাতটি ব্যায়ামের নিয়ম আলোচনা করা হবে।

পেজ সূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম গর্ভাবস্থায় এর কার্যকারিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা এই অবস্থায় প্রতিটি গর্ভবতী মহিলার উচিত শারীরিক মানসিক দিক থেকে ফিটনেস থাকা। আর গর্ভাবস্থায় ফিটনেস ধরে রাখায় নিয়মিত  ব্যায়ামেরকোন বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করা নিরাপদ ও কার্যকরী একটি উপায়। এই অবস্থায় বিশেষ কোনো জটিলতা না থাকলে ব্যায়াম করা উচিত।

এক্ষেত্রে আপনার জন্য কোন ব্যায়ামগুলো বেশি উপযোগী সেগুলি খুজে অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারবেন। এতে করে আপনার আরামদায় পাবেন। তাছাড়া গর্ভ অবস্থায় ব্যায়াম করলে মা ও শিশু প্রজননকালে দুজনে সুস্থ থাকে। তাই প্রতিটি গর্ভবতী মহিলার উচিত গর্ভাবস্থায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ব্যায়ামের নীতিমালা জেনে রাখা।

গর্ভাবস্থায় কেন এই ব্যায়াম করবেন

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অনেক উপকার। কেননা এই অবস্থা তে ব্যায়াম করলে অনেক ধরনের উপকার হয় থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করলে কি কি উপকার হয।
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাড়া থেকে বিরত রাখে।
  • সিজারিয়ান অপারেশন সম্ভাবনা কমিয়ে নরমাল ডেলিভারির উপযুক্ত করে তোলে।
  • গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • এ অবস্থায় ব্যায়াম করার ফলে বেশি শক্তিশালী করে তোলে।
  • ডেলিভারির সময় ফর সেপ ভ্যানটুস জাতীয় যন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে নিয়ে আসে।
  • শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
  • রাতে ভালোমতো ঘুমাতে সাহায্য করে।

এই অবস্থায় কিভাবে ব্যায়াম করা উচিত

গর্ভাবস্থায় একটি মহিলার ব্যায়াম করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল এ অবস্থায় কিভাবে ব্যায়াম করা উচিত। কেননা, কি অবস্থা চাইলেও যেকোন ভাবে ব্যায়াম করা উচিত নয়। এতে করে মা ও শিশুর উভয়ের ক্ষতি হতে পারে। তাই এই অবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলার উচিত সঠিক নিয়ম ব্যায়াম করা। যাতে করে উভয়ের কোনো ক্ষতি না হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

একজন গর্ভবতী মহিলার ব্যায়ামের আদর্শ সময়ে সপ্তাহে ২.৫ ঘন্টা ধরা হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি চায় তাহলে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হালকাভাবে অথবা ধীরে ধীরে ব্যায়াম  করতে পারে। তবে এই রুটিনের পুরোটাই নির্ভর করে একজন গর্ভবতী মহিলার শরীর-স্বাস্থ্যের উপর। কেননা, এই অবস্থায় অনেকেই আছেন যারা দিনের দশ মিনিটের বেশি ব্যায়াম করলে কষ্ট অনুভূত হয়। আবার অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধরে ব্যায়াম করলে কোন কিছু হয় না। তাই বলা যায় গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয় তো এর নিয়ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় ঘরোয়া উপায়ে ব্যায়ামের কয়েকটি নিয়ম

এই আর্টিকেল এর মধ্যে এমন কিছু ঘরোয়া ব্যায়ামের উল্লেখ করা রয়েছে যা একজন গর্ভবতী মহিলার  পেশি লোকে শক্তিশালী করে তোলে সেই সাথে অতিরিক্ত ওজন বহনের সাহায্য করে থাকে। এমনকি রক্ত চলাচল উন্নত করে, বিভিন্ন জায়গায় শক্তি বৃদ্ধি করে, এক কথায় বলা যায় সবকিছুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় _ঘরোয়া -উপায়ে _ব্যায়ামের -কয়েকটি _নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ঘরোয়া উপায়ে কয়েকটি ব্যায়াম নিম্নে দেওয়া হলঃ

(১) গভীর শ্বাস প্রশ্বাস
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় একটি গর্ভবতী মহিলার মানসিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ও মনে শান্তি বজায় রাখতে সঠিকভাবে সাহায্য করে থাকে। এই ব্যায়ামের সহজ পদ্ধতি হলো একাধারে চার সেকেন্ড শ্বাস নিন এবং চার সেকেন্ড ধরে  রাখুন।
(২) ক্যাট কাউ স্ত্রেচ
এই ব্যায়াম পিঠের নিচের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
এই ব্যায়াম করার নিয়মঃ
  • হাত ও হাটুতে ভর করে মেঝেতে বসতে হবে।
  • শ্বাস নিতে হবে এবং পিঠ নীচে নামিয়ে পেটের দিকে বাড়তে হবে।
  • তারপর শ্বাস ছাড়তে হবে এবং পিঠের অংশ উপরের দিকে বাড়াতে হবে।
(৩) ওয়াকিং
গর্ভাবস্থায় হালকা হাটা খুব উপকারী। এটা শরীরটা সচল রাখে এবং ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে ।
প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটা উচিত।

গর্ভাবস্থায় কি ধরনের ব্যায়াম করা উচিত 

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময় কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ।গর্ভাবস্থায় কি ধরনের ব্যায়াম করার উচিত এই সম্পর্কে নিম্নে পরামর্শ দেয়া হলঃ
  • হালকা হাটাঃ গর্ভাবস্থায় হাটাহাটি করা সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদে একটি ব্যায়াম। এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং শরীরকে সুস্থ রাখে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • প্রেগনেন্সি ইয়োগাঃ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী যদি কোন গর্ভবতী মহিলা গর্ভ অবস্থায় প্রেগনেন্সি ইয়োগা করে থাকে তাহলে এটি তার শরীরের পেশী শক্তিশালী করে তোলে । এবং মানসিকভাবে সচ্ছলতা প্রদান করে।
  • শ্বাস-প্রশাসের ব্যায়ামঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় একটি গর্ভবতী মহিলার মানসিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ও মনে শান্তি বজায় রাখতে সঠিকভাবে সাহায্য করে থাকে। এই ব্যায়ামের সহজ পদ্ধতি হলো একাধারে চার সেকেন্ড শ্বাস নিন এবং চার সেকেন্ড ধরে  রাখুন।

কতক্ষণ ধরে ব্যায়াম করবেন

তিনি পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ব্যায়াম  করে দিয়ে শুরু করতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যায়াম করতে পারেন।তারপর আস্তে আস্তে আস্তে ব্যায়াম এর সময় বারান। এভাবে ব্যায়ামের সময়  এবং ব্যায়ামিত তীব্রতা বাড়াতে বাড়াতে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসুন যে দিনে ত্রিশ মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন।

নরমাল ডেলিভারির জন্য কোন সময় ব্যায়াম করা উচিত

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলার সিজার না করে নরমাল ডেলিভারির জন্য ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা এর নিয়ম একজন গর্ভবতী মহিলার এই বিষয়ে জানাটা  খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি গর্ভবতী মহিলা চাই যে না সিজার না করে কিভাবে নরমালে বাচ্চা ডেলিভারি করা যায়। এই বিষয়ে জানতে হলে আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো করে করতে হব।

নরমাল ডেলিভারির জন্য ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে  গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় ত্রি মাসিক (৪-৭ মাস) হতে শুরু করা ভালো। এই সময় সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করা হলে শরীরে শক্তি বাড়ে এবং সেইসাথে বাচ্চা নরমালে হওয়ার জন্য সঠিক পজিশন নিতে সাহায্য করে থাকে। গর্ভাবস্থায় শেষের ৮ থেকে ৯ মাস এই সময়ে ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এই অবস্থায় বিশেষ করে হাটাহাটি, প্রেগনেন্সি পিলা টিস, অথবা স্বাভাবিক যোগ ব্যায়াম করা যেতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম এই এই অবস্থায় করা থেকে বিরতি থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় যে সকল ব্যায়াম করা উচিত নয়

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ  বিষয় মনে রাখা উচিত ।সেটা হল,স্বাভাবিক সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত কোন ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়। কিন্তু আগে থেকে শারীরিক ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকে তাহলে হঠাৎ করে গর্ব অবস্থায় ব্যায়াম করা উচিত নয়। তাহলে মা ও শিশুর উভয়ের ক্ষতির দিক সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে চাইলে অল্প অল্প করে প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ মিনিট ব্যায়াম করে অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে না। তাহলে মনে হয় না কোন সমস্যা বা ক্ষতি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ ব্যায়ম যদিও নিরাপদ তবুও এমন কিছু কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো মা ও শিশুর উভয়ের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের ব্যায়াম গল্প অবস্থায় এগিয়ে চলায় উচিত। যেমনঃ
  • যে এসব ব্যায়াম বা খেলাধুলা করলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় সেগুলো থেকে এড়িয়ে  চলতে হবে। যেমনঃ হট ইয়োগা, তাছাড়া যে সকল স্থানে তাপমাত্রা অনেক এবং বাতাস চলাচল তেমন নেই সেখানে ব্যায়াম করা উচিত নয়।
  • যেসব ব্যায়ামগুলো করতে গিয়ে  পেটে ব্যথা হতে  সেই সকল ব্যায়াম থেকে বিরতি থাকতে হবে। যেমনঃ উচ্চ কোন স্থানে দ্রুত উঠা এবং সেখান থেকে দ্রুত নামা একেবারে ঠিক নয়।
  • আগে থেকে অভ্যাস না থাকলে গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন ফুটবল, হকি ইত্যাদি।
  • তাছাড়া অতিরিক্ত ভারী ওজন তোলা গর্ভাবস্থায় পিঠে চাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং পেশির টান টান সৃষ্টি হতে পারে।
  • কোন স্থানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পা ফুলে যেতে পারে তাই এই অবস্থায় এসব কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

বিশেষ সর্তকতা

সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিটি গর্ভবতী মহিলা গর্ব অবস্থায় নিরাপদ ব্যায়ামগুলো করতে পারবেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন রোগে যদি আক্রান্ত থাকেন তাহলে গর্ভকালীন করলে ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করা উচিত। গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা।
  • অতিরিক্ত ভার না করে প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করার ভালো। যেমনঃ প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট আস্তে আস্তে করে হাঁটা।
  • ব্যায়াম করার সময় নিয়মিত পানি পান করা জরুরী যাতে শরীর হাইড্রেট থাকে।
  • গরম পরিবেশে ব্যায়াম করে এড়িয়ে চলা উচিত। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ব্যায়াম করতে হবে।
  • একটানা অনেকক্ষণ ধরে ব্যায়াম করা থেকে বিরতি থাকতে হবে।
  • ব্যায়াম করার সময় যদি অতিরিক্ত মাথা ঘোরায় তাহলে সেই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় একটানা অনেকক্ষণ শুয়ে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও এর নিয়ম গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলার জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গর্ভ অবস্থায় সঠিক ব্যায়াম একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস কমে এবং সেইসাথে সিজার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url